গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে নওগাঁর আত্রাই এবং রাণীনগর উপজেলায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা। দুই উপজেলায় এপর্যন্ত দুইজন ব্যবসায়ীকে মারধর করে অন্তত: ৩০ ভরি স্বর্ণের এবং ৪০০ ভরি চান্দির গহনা ও নগদ টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া কোথাও পুলিশ পরিচয়ে আবার কোথাও গোয়াল ঘরের তালা কেটে ও দরজা ভেঙে ৮১টি গরু-ছাগল লুট-চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো মালামাল উদ্ধার কিংবা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে রাত নামলেই আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় পরতে হয় আত্রাই-রাণীনগর উপজেলার বাসিন্দাদের।
জানা গেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার দাড়িয়াগাঁর্থী গ্রামের স্বর্ণকার নান্টু কুমার প্রামানিক আহসানগঞ্জ বাজারে অবস্থিত নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রিংকু জুয়েলার্স থেকে সন্ধ্যায় মোটরসাইকেল যোগে বাড়ী ফিরছিলেন। পথি মধ্যে মালাধর ব্রিজের নিকট পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা পথরোধ করে মারধর করে ১৫ ভরি স্বর্ণের এবং ৩০০ ভরি চান্দির গহনা এবং নগদ দুই লক্ষ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা নান্টুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। এছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার থাঐপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন, সাইদুর রহমান ও রাজা হোসেনের মোট ৭টি গরু এবং ২টি ছাগল, ২৩ সেপ্টেম্বর দিঘীরপার গ্রামের নিজামউদ্দীন হাজির খামার থেকে ৮টি গরু, ১২ অক্টোবর চকবিষ্টপুর গ্রামের মইতুল সরকারের ৪টি গরু, ২৫ অক্টোবর ভোঁপাড়া গ্রামের ছামছুর রহমানের ২টি গরু, ২ ডিসেম্বর বলরামচক গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেনের ৪টি গরু, ২১ জানুয়ারি বাঁকা গ্রামের মিঠু হোসেনের ৫টি গরু, ৫ ফেব্রুয়ারি কচুয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ৩টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। তবে এসব চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেও কোনো মালামাল উদ্ধার কিংবা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
স্বর্ণকার নান্টু কুমারের স্ত্রী পপি রাণী জানান, মারধর করে এতোগুলো স্বর্ণ-চান্দির গহনা এবং নগদ টাকা লুটকরে নিয়ে গেলো অথচ ঘটনার কয়েকদিন পার হয়ে যাচ্ছে এখনো পুলিশ এগুলো উদ্ধার করতে পারেনি।
আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাব উদ্দীন বলেন, স্বর্ণ-চান্দির গহনা এবং নগদ টাকা লুটের ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া লুট এবং চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে নওগাঁর রাণীনগরে গত ১৪ নভেম্বর ব্যবসা শেষে বাড়ী ফেরার পথে উপজেলার স্থল গ্রামের শ্যামল চন্দ্রের ছেলে মিলন চন্দ্র শীল মোটরসাইকেল যোগে বাড়ী ফেরার পথে গ্রামের কাছ পৌছলে ৩/৪ জন তাকে মারধর করে ১৫ ভরি স্বর্ণ ও ১০০ ভরি চান্দির গহনা এবং নগদ ৬০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা বগুড়া সজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করায়। গত ১৫ আগস্ট উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের হামিদুল ইসলামের গোয়াল ঘর থেকে ৩টি গরু চুরি এবং ২৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার ভান্ডারা এলাকায় আশার আলো কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির খামারের পাহাড়াদারকে মারধর করে ১৫টি গরু লুটের ঘটনা ঘটে। গত ২৩ অক্টোবর করজগ্রামে এক কৃষকের গোয়াল ঘরের দরজা ভেঙে ৩টি গরু, গত ৫ নভেম্বর বিষ্ণপুর গ্রামে রেল লাইনের পাশে সিরাজুল ইসলামের খামার থেকে পুলিশ পরিচয়ে ৭টি গরু লুট, ১২ ডিসেম্বর কাশিমপুর সর্বরামপুর গ্রামের আসাদুল ইসলাম ও ইদ্রিস আলীর ৫টি গরু, গত ১৩ ডিসেম্বর লক্ষীপুর মদনশাহ শহর থেকে একরামুলের ২টি গরু এবং ১১ জানুয়ারি কুজাইল থেকে মোয়াজ্জেম হোসেনের ৩টি গরু, ৫ মার্চ রাতে উপজেলার কালীগ্রাম বড়িয়াপাড়া গ্রামের শেরদুল ইসলামের প্রায় ২ লাখ টাকা দামের ২টি গরু এবং ১০ মার্চ রাতে উপজেলার একডালা স্কুল পাড়া গ্রামের আব্দুল বারিক হোসেনের চারটি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া গত ২২ ডিসেম্বর রাতে রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়কের একাধিক স্থানে গাছ ফেলে ডাকাতরা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং একাধিক স্থানে ডাকাতির চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।
স্বর্ণকার মিলন চন্দ্র শীল জানান, থানায় অভিযোগ করেছি কিন্তু পুলিশের তৎপরতা না থাকায় মালামাল উদ্ধার কিংবা জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের গ্রেফতারসহ মালামাল উদ্ধারের দাবি জানান তিনি।
এছাড়া আত্রাই এবং রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে গভীর নলকূপের প্রায় ২৫টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে কীটনাশক, মুদি দোকান ও ভ্যান গাড়ী চুরির ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক এসব চুরি-ছিনতাই কিংবা লুটের ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত থানাপুলিশ জড়িত কাউকে গ্রেফতার অথবা চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি। ফলে একদিকে নিরাপত্তাহীনতা এবং অন্যদিকে হতাশা ও আতংকিত হয়ে পরেছেন দুই উপজেলার বাসিন্দারা।
রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজ মো: রায়হান বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। এব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না। তবে খোঁজ খবর নিয়ে জড়িতদের গ্রেফতারসহ মালামাল উদ্ধার করার চেষ্টা করা হবে।
মন্তব্য করুন