ঢাকা , সোমবার, ২০২৪ নভেম্বর ১১, ২৬ কার্তিক ১৪৩১
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অফিস করলেন সিডিএ’র নতুন চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ ‘দায়িত্ব পালন করতে হবে দেশপ্রেম, সততা এবং আন্তরিকতা দিয়ে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২৪ এপ্রিল ৩০, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন
#

মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পাঁচ দিন পর নিজ কার্যালয়ে গেলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক মোহাম্মদ ইউনুছ। শুরুর দিনেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের গাফিলতি না করার জন্য হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল ৯টায় সিডিএ ভবনে পৌঁছান নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনূছ। আগেই জানিয়েছিলেন, ফুল দিয়ে কেউ শুভেচ্ছা জানালে বিব্রত হবেন। সেজন্য যোগদানের আগে গোপনীয়তা রক্ষা করেন। সিডিএ  ভবনে পৌঁছে নিজের কার্যালয়ে ঢোকার আগে সংস্থার প্রতিটি বিভাগীয় ও শাখা অফিস ঘুরে দেখেন চেয়ারম্যান। এর পর তিনি নিজ কক্ষে বসেন। প্রথমে সিডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

মতবিনিময়ে সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। শুধু মুক্তিযোদ্ধা নয়, অস্ত্র হাতে ট্রেনিং পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা। আমাকে অন্য কারও সঙ্গে মেলালে ভুল করবেন। অফিস টাইম সকাল ৯টায়। সবাইকে সময় মতো অফিসে আসতে হবে। দায়িত্ব পালন করতে হবে দেশপ্রেম, সততা এবং আন্তরিকতা দিয়ে। কোনো ধরনের গাফিলতি আমি মেনে নেব না। চেয়ারম্যান হয়েছি বলে আমি এসি রুমে বসে থাকব, ভাবলে ভুল করবেন।

এরপর তিনি সিডিএর বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া, সিডিএ ভবনে চেয়ারম্যানের প্রথমদিনে আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। কয়েকজন রাজনৈতিক শুভাকাঙ্ক্ষী এদিন তার সঙ্গে দেখা করেন। তবে নেতাকর্মীর ভিড় ছিল না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র গিয়াস উদ্দিন সিডিএ ভবনে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক উপকমিটির সদস্য নুরুল আজিম রনিসহ কয়েকজন কার্যালয়ে গিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। বিকেল সাড়ে ৪টায় চেয়ারম্যান কার্যালয় ত্যাগ করেন।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, আমি ঠিক সকাল ৯টায় অফিসে পৌঁছাই। তবে নিজের রুমে ঢোকার আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যেকের রুমে গিয়েছি। কে উপস্থিত, কে অনুপস্থিত সেটা যাচাই করেছি। এরপর তাদের সঙ্গে মিটিং করে আমার মেসেজ জানিয়ে দিয়েছি। উনারা সবাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী। ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তে যে দেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেই দেশের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রতিটি কর্মে দেশপ্রেম এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকতে হবে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারের প্রতি যেমন জবাবদিহিতা থাকবে, তেমনি ত্রিশ লাখ শহিদ এবং সৃষ্টিকর্তার কাছেও থাকতে হবে। এসব বিষয় আমি তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছি, আমি শুধু চেয়ারম্যান নই, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সবাই মিলেমিশে এ শহরকে আমরা বাসযোগ্য করব। আমি কারও বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে চাই না, কিন্তু কেউ দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করতে পারবে না। এটা আমি বরদাশত করবো না, বলেন মোহাম্মদ ইউনুছ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক মোহাম্মদ ইউনুছকে তিন বছরের জন্য সিডিএ চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে ২৪ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওইদিন বিকেলেই তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গিয়ে যোগদান করেন।

২০০৯ সালে সিডিএ চেয়ারম্যান পদে প্রথম রাজনৈতিক নিয়োগ পান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। দফায় দফায় মেয়াদ বেড়ে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর ছালাম বিদায় নেন। তিনি এখন চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও নগরীর একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য।

২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল প্রথম দফায় দুই বছরের জন্য সিডিএ চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দোভাষ। মেয়াদ বাড়ানোর পর তিনি মোট ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেন। ইউনুছকে নিয়োগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিদায় নেন দোভাষ।

প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত ইউনুছ সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য তিনি সমধিক খ্যাত। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মোছলেম উদ্দিন (বর্তমানে উভয়ে প্রয়াত) এবং ইউনুছ মিলে চট্টগ্রামে তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীর কমান্ডারের বাসভবনে দুঃসাহসিক আক্রমণ চালাতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। বন্দি অবস্থায় অমানবিক নির্যাতন সয়েছিলেন তারা। একপর্যায়ে পাগল সেজে হানাদার বাহিনীর বন্দিশালায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে চলে গিয়েছিলেন রণাঙ্গনে।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিশোধ নিতে মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে যে কয়জন মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, ইউনুছ তাদের একজন।

ইউনুছের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবেও একসময় দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দীর্ঘসময় রাজনীতিতে পদ-পদবিবিহীন অবস্থায় থাকেন। তবে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি মহিউদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের মহাসচিব। চট্টগ্রামে সিআরবিতে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তাতে নেতৃত্বের কাতারে ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ইউনুছকে জাতীয় পরিষদের সদস্য করে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video