শমসেরনগরের মাটি অত্যন্ত পুণ্যময়। এই মাটিতে শুয়ে আছেন হযরত শাহ জালাল ইয়ামনি (রহ:) এর সফর সঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়া, এর মধ্যে অন্যতম আউলিয়া হযরত শাহ কালা (রহ:) ও হযরত শাহ মালিক গাজী (রহ:)। এছাড়া অসংখ্য আউলিয়া কেরামের সাধনার স্থল ছিল শমসেরনগর। অনেক আউলিয়া তাদের বেলায়তি স্তরে পৌঁছার পর শমসেরনগর থেকে চলে গেছেন, আবার অনেকেই পরদা (ওফাত) হয়ে এখানে সমায়িত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম আউলিয়া হচ্ছেন হযরত মফিজ উদ্দিন শাহ (রহ:)।
হযরত মফিজ উদ্দিন শাহ (রহ:) এর জীবন অনুসন্ধান করলে দেখা যায় তিনি রিয়াজাত, মোরাকাবা, মোশাহাদার মাধ্যমে এমন স্তরে পৌঁছেছিলেন, যা থেকে অসংখ্য কারামত প্রকাশ পায়। তখনকার সময় কিছু আউলিয়া বিদ্বেষী মানুষ ছিলেন, যারা হযরত মফিজ উদ্দিন শাহ (রহ:) এর সংস্পর্শে এসে বুঝতে পারেন আউলিয়া কেরাম কত বড় আল্লাহর নিয়ামত, এবং তাদের ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে তারা আউলিয়া প্রেমিক হয়ে ওঠেন। হযরত মফিজ উদ্দিন শাহ (রহ:) এর মাহাত্ম্য মুসলিমদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মালম্বী লোকেরাও উপলব্ধি করতে পারেন এবং তারা উনার সান্নিধ্য লাভের জন্য দলে দলে আসতে শুরু করেন।
হযরত মফিজ উদ্দিন শাহ (রহ:) শমসেরনগরের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। মানুষের বিভিন্ন সমস্যা, দুঃখ-দুর্দশার সময় তারা যখন এই ওলীর শরণাপন্ন হয়েছেন, তখন আল্লাহর রহমতের মাধ্যমে তিনি তাদের কল্যাণ সাধন করেছেন। এভাবে তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে গেছেন, এমনকি তাঁর ওফাতের পরও মানুষ তাঁকে ভুলতে পারেনি। ১৩৬০ বাংলা ২৮ ফাল্গুনে হযরত মফিজ উদ্দিন শাহ (রহ:) ওফাত হয়।
প্রতি বছর ২৮ ফাল্গুন হযরত মফিজ উদ্দিন শাহ (রহ:) এর "উরস মোবারক" অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ ফাল্গুন আসলেই হাজার হাজার ভক্ত, আশেকান এবং আউলিয়া প্রেমিকের ঢল নামে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একজন ওলী আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কষ্ট, রিয়াজাত, মোরাকাবা, মোশাহাদার মাধ্যমে যে স্তরে পৌঁছেছিলেন, তার ওফাতের তারিখ বা উরসের দিনে কিছু বদ লোকের স্বার্থের কারণে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ হয়। মহিলাদের পুরুষদের একত্রে গান বাজানোর আসর, নাচ-গান, জুয়া এবং মাদকের আসর বসে। এমন পরিস্থিতিতে একদিন মাজারে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, জিকির, মিলাদ ক্বিয়াম, ওয়াজ, এবং দোয়া করে মানুষ যেন উনার রুহানি ফয়েজ ও বরকত লাভ করতে পারে, কিন্তু কিছু লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব ইসলামের বিপরীত কাজ করে।
ধিক তাদের প্রতি, যারা আল্লাহর ওলীর মাজারকে ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে আর আউলিয়া বিদ্বেষীদের মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখি না। যারা আউলিয়া বিদ্বেষী, তাদের উদ্দেশ্যে বলব— আল্লাহর অলীগণ সাধারণ মানুষের মতো নন, তাঁদের ইন্তিকালের পরও তারা সাধারণ মানুষের কল্যাণে সক্ষম। হাদীসে আল্লাহর পুণ্যাত্মা বান্দাদের মর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ তা'আলা বর্ণনা করেছেন, যে লোক আমার অলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। ফরজ ইবাদত দ্বারা বান্দা যতটুকু আমার নৈকট্য অর্জন করতে পারে, তা আর কোন কিছু দ্বারা অর্জিত হতে পারে না।" (সূত্র: সহীহ বোখারী, কিতাবুর রিকাক, হাদীস: ৬৫০২)
তাহলে আগামী ২৮ ফাল্গুন হযরত মফিজ উদ্দিন শাহ (রহ:) এর "উরস মোবারক" শরীয়ত সম্মতভাবে সফল করতে সবাইকে দাওয়াত জানানো হচ্ছে।
শমসেরনগর মহান আউলিয়া হযরত মফিজ উদ্দিন শাহ (রহ:) এর প্রতি শ্রদ্ধার সাথে, আমি শেষ করছি
"মেশকাতুল মুহেব্বীন হযরত মফিজ শাহ আহলে তাসাররফ আপকি বেলায়ত পে লাখো সালাম"