ঢাকা , শুক্রবার, ২০২৪ মে ১৭, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাঁশখালীতে শতবর্ষী সড়ক বিচ্ছিন্ন করলো চা-বাগান কতৃপক্ষ দূর্ভোগে স্থানীয়রা

বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত : সোমবার, ২০২৪ এপ্রিল ২৯, ০৪:৫০ অপরাহ্ন
#

২৯ এপ্রিল (সোমবার)চট্টগ্রামের বাঁশখালী পুকুরিয়া ইউপির ৬ নং ওয়ার্ড বনাপুকুর পাড় থেকে নতুন পাড়া হয়ে চন্দ্রপুকুর পাড়  সংযোগ সড়ক নামে শতবর্ষী ও প্রাচীনতম চলাচল সড়কের মাঝপথে খাল কেটে দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে চা-বাগান কতৃপক্ষ, এতে  চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওই এলাকায় বসবাসরত শত শত পরিবার হাজার হাজার পরিবারের মানুষ।এই নিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

২৮ এপ্রিল (রবিবার) বিকেলে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে সড়কটির মাঝপথে স্ক্যাবেটর দিয়ে মাটি কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার দৃশ্য দেখা গেছে, একই ভাবে বনাঞ্চলের হাজার হাজার গাছ-পালা কেটে পাহাড় নিধন করা হচ্ছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের বনা পুকুর পাড় হয়ে নতুন পাড়া সড়কটি জনবহুল ও ব্যস্ততম সড়ক। হাজার হাজার মানুষের চলাচল সড়কটি নতুন কোন সড়ক নয় বরং এই সড়কটি শত শত বছরের পুরানো সড়ক। বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রের আগ্রাসন ও নদী ভাঙ্গনে বসতভিটা হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়া শত শত পরিবারের মানুষ  পুকুরিয়া, চাঁদপুর, বেলগাঁও পাহাড়ি পাদদেশে জীবন বাঁচতে মাথা গোছানোর ঠাই করে নিয়েছে। আর ওইসব মানুষের একমাত্র চলাচল মাধ্যম হচ্ছে বনাপুকুর পাড় থেকে নতুন পাড়া হয়ে নুরুল আজিমের খামার হয়ে যাওয়া চন্দ্রপুকুর পাড় সংযোগ সড়ক। এছাড়াও নাটমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়, মারকাযুল ইমান ইসলামিক ইনস্টিটিউট ও হেফজখানা, পুকুরিয়া বড় মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শত শত শিক্ষার্থীরাও এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন।

কিন্তু এরই মধ্যে চা-বাগান কতৃপক্ষ স্ক্যাবেটর গাড়ী দিয়ে ওই সড়কের মাঝপথে কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়াতে পুরো এলাকাজুড়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এসময় ছবি- ভিড়িও ধারণ করতে সাংবাদিকদের বাঁধা দেন চা-বাগানে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক। ছবি তুলতে চাইলে একপর্যায়ে সাংবাদিকদের হুমকি প্রদান করেন চা-বাগানে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক।

বাঁশখালী, পেকুয়া, আনোয়ারাসহ সমুদ্র উপকূলে সমুদ্রের আগ্রাসন ও নদী ভাঙ্গনে বসতভিটা হারানো শত শত পরিবারের অসহায় মানুষ এখানে আশ্রয় গ্রহণ করেছে, আর ওইসব পরিবারের হাজার হাজার মানুষের একমাত্র যাতায়াত মাধ্যম হচ্ছে এই সড়কটি। এরই মধ্যে চা-বাগান কতৃপক্ষ প্রভাব খাটিয়ে স্ক্যাবেটর গাড়ি সড়কটির মাঝপথে যাতায়াত বিচ্ছিন্ন করে দিলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে।চা-বাগান কতৃপক্ষ এমন জনস্বার্থ পরিপন্থী কাজ করলেও জনপ্রতিনিধিরা কেউ কিছু বলছেনা।

অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ মানুষকে এদেশে আশ্রয় দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাদের খাদ্য বাসস্থানসহ সুরক্ষার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে মানবতার মা হিসেবে পরিচিত।

কিন্তু আমরা এদেশের নাগরিক হয়েও নানা ভাবে  এতো নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। এছাড়াও দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন ভারসাম্য ঠিক রাখতে যেখানে পরিবেশ বান্ধব গাছ রোপণের মাধ্যমে সবুজ বনায়ন গড়ে তুলতে জোরতাগিদ দিয়ে সরকার যেখানে হাজার হাজার কোটি বনায়নের জন্যে ব্যয় করে যাচ্ছে, সেখানে একদিকে পুকুরিয়া লটচাঁদপুর পাহাড়ি বনায়নের হাজার হাজার গাছ-পালা কেটে পুরো বনাঞ্চল সাবাড় করছে বনাঞ্চল, অপরদিকে স্ক্যাবেটর গাড়ী পাহাড় নিধন করে দিচ্ছে চা-বাগান কতৃপক্ষ। তাদের এইসব কর্মকাণ্ডে বাঁধা দিচ্ছেনা কেউ। এমনকি স্থানীয়  সাংবাদিকরাও এই সব বিষয়ে সংবাদ প্রচার করেনা। অথচ পুরো পরিবেশ ধ্বংসের মূখে ঠেলে দিচ্ছে বলেও জানান তারা।

তাই শতবর্ষী এই সড়কটি জনস্বার্থে যথাযথ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে এবং বনাঞ্চল ও পাহাড়ি পরিবেশ রক্ষা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মহোদয়, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় সচেতন মহল।

পুকুরিয়া ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ ফরিদ বলেন, এতো জনবহুল চলাচল সড়কটির মাঝপথে কেটে দিয়ে চা-বাগান কতৃপক্ষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার খবর পেয়ে আমি সেখানে যাচ্ছি, এলাকার হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত মাধ্যম ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া শত শত শিক্ষার্থীরাও এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে, কিন্তু চা-বাগান কতৃপক্ষ এধরণের জনস্বার্থ বিরোধী কাজ কেন করলো সেটা জানিনা।

এবিষয়ে জানতে চা-বাগানের ম্যানেজার আবুল বাশারের সাথে যোগাযোগের একাধিক চেষ্টা করলেও ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আব্দুল খালেক পাটোয়ারী বলেন, সড়কের মাঝপথে কেটে দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি, আর নির্বিচারে পাহাড় কাটা এবং বনাঞ্চল থেকে গাছ কাটারও কোন সুযোগ নেই। সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং বনাঞ্চল থেকে গাছ কাটা ও পাহাড় নিধনের বিষয়টি আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসবো।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video