ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে ইউরোপ যাওয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | টুয়েন্টিফোরটিভি
প্রকাশিত : শনিবার, ২০২১ জুলাই ৩১, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

উত্তাল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো থেকে হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর ইউরোপযাত্রা নতুন নয়। যুদ্ধবিধস্ত সিরিয়ার মতো দেশগুলো থেকেও বহু মানুষ একই পথ ধরছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে অবৈধপথে ইউরোপ যাওয়ায় শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশিরা। এদেশে যুদ্ধ নেই, দারিদ্রের কষাঘাতও আফ্রিকার দেশগুলোর মতো তীব্র নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার রোলমডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তারপরও দলে দলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশিদের ইউরোপ যাওয়ার প্রচেষ্টা অবাক করেছে সবাইকে।

চলতি বছরের ২৬ জুলাই পর্যন্ত ইতালি, গ্রিস, স্পেন, সাইপ্রাস ও মাল্টায় পৌঁছেছে অন্তত ৪৭ হাজার ৪২৫ জন শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশী। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩৩২ জনই বাংলাদেশি। অর্থাৎ, কপালজোরে জীবিত অবস্থায় ইউরোপের তীরে পৌঁছানো প্রতি সাতজনের একজন বাংলাদেশের নাগরিক।

এধরনের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই পাচারের শিকার হয়ে লিবিয়া, তিউনিসিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় পৌঁছান। নিশ্চিতভাবে প্রাণ হারিয়েছেন অজ্ঞাত বহু লোক। ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার পথে অন্তত ৯৩৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর খবর রেকর্ড করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, যাদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশি।

কেন এই প্রাণের ঝুঁকি
আফ্রিকান উপকূল থেকে রওয়ানা দেয়া লোকদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা এত বেশি কেন, তা জানার চেষ্টা করেছে ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষগুলো। তবে কারণটি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তালিকার শীর্ষে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম কিছুটা বেমানানই বটে! শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে তিনটি হচ্ছে আফ্রিকার (তিউনিসিয়া, আইভরি কোস্ট ও মিসর), আরেকটি হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া। ভৌগলিকভাবেও এসব দেশ থেকে সবচেয়ে দূরের অবস্থান বাংলাদেশের।

ধারণা করা হয়, এসব বাংলাদেশির একটি বড় অংশই পাচারকারীদের হাতে পড়ে সাগরপথে ইউরোপ রওয়ানা দেয়। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচারকারী চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতারের পর জানা গেছে, কতটা ভয়ংকর এই যাত্রা। অবৈধপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এভাবে ইউরোপ যেতে কখনো কখনো কয়েক বছর লেগে যায়। শুধু লিবিয়া উপকূল পর্যন্ত পৌঁছাতেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভুক্তভোগীদের।

তাছাড়া, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আর্থিক সংকট বেড়ে যাওয়াও মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় প্ররোচিত করছে বলে মনে করা হয়।

রয়েছে ১৮টি রুট
ইউরোপীয় সীমান্ত ও কোস্টগার্ড সংস্থা বা ফ্রন্টেক্সের তথ্যমতে, ২০০৯ সাল থেকে এপর্যন্ত অন্তত ৬০ হাজার বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপ গিয়েছেন। এভাবে যারা ইউরোপ ঢুকছেন, তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তারা সাধারণত ১৮টি রুট ধরে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রধান রুট হচ্ছে কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগর।

অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ডিসপ্লেসমেন্ট ট্র্যাকিং ম্যাট্রিক্সের হিসাবে, ২০২০ সালে সাগর ও স্থলপথ দিয়ে ইতালি, মাল্টা, স্পেন বা গ্রিসে প্রবেশ করেছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার বাংলাদেশি।

চলতি মাসেই তিউনিসিয়ান রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছিল, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টাকালে নৌকা ডুবে অন্তত ১৭ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। ৮ জুলাই তিউনিসিয়ান নৌবাহিনী মাঝসমুদ্র থেকে ৪৯ জন বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে। একই পথে গত ৩ জুলাই অন্তত ৪৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী নৌকাডুবির পর নিখোঁজ হন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশিরাও ছিলেন।

গত ১৮ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত সাত শতাধিক বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নৌকাডুবির পর উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তিউনিসিয়ান নৌ কর্তৃপক্ষ। তারা ওই ৩ হাজার ৩৩২ বাংলাদেশির অংশ, যারা চলতি বছরে ইউরোপ যাওয়ার পথে উদ্ধার বা আটক হয়েছেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: শামসুল কবির শাহীন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক: মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির
নির্বাহী সম্পাদক:এম.এ কাইয়ুম

■ অফিস  :
প্রধান কার্যালয় : ২৪, গার্ডেন ভিউ, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লুফ রোড (লিংক রোড), ৬নং ব্রীজ, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম।
সম্পাদকীয় কার্যালয় : এম.এম টাওয়ার (৮ম তলা, লিফট-৭), সানমারের উত্তর পাশে, জিইসি মোড়, চট্টগ্রাম

মোবাইল : +880 1844 29 28 58
ই-মেইল : newsoffice.24tv@gmail.com

কপিরাইট © 2018-2023 24tv.com.bd । একটি টুয়েন্টিফোর ফ্যামেলির প্রতিষ্ঠান
Design & Developed by Smart Framework