২ যুগেও থামেনি পাহাড়ের কান্না

টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২১ ডিসেম্বর ০২, ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৪তম বর্ষ পূর্তি আজ বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর)। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে চুক্তি করেন। যেটিকে শান্তি চুক্তি নামে অভিহিত করা হয়। কিন্তু চুক্তির ২ যুগ পার হলেও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি পাহাড়ে।

বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি এই তিন জেলায় এখনও মানুষ অস্ত্রের ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। গুম, খুন, চাঁদাবাজি এখনও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। খুনের ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন শত শত মানুষ। প্রাণে বাচঁতে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে পালিয়ে বেড়ালেও বুলেটের মুখে পড়ে ঝরছে একের পর এক প্রাণ। সবশেষ ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বান্দরবান জেলায় দোকানে ঢুকে আওয়ামী লীগ কর্মীকে খুন করে সন্ত্রাসীরা।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, সরকার পাহাড়ে বসবাসকারীদের জীবনমান উন্নয়নে গ্রহণ করেছে নানা পদক্ষেপ। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদের মাধ্যমে পাহাড়ে শিক্ষা স্বাস্থ্য যোগাযোগ চিকিৎসাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাহাড়িদের প্রতিনিধি নিয়োগ, জেলা পরিষদগুলোতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ১১টি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিয়োগ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে জেলাপরিষদের ন্যাস্ত বিভাগে রূপান্তর করা, সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার, শিক্ষা ক্ষেত্রে চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষিত কোটাসহ ৪৮টি ধারা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে সরকার। কিন্তু তারপরও অস্ত্রের ঝনঝনানি থামেনি পাহাড়ে। বরং গুম, খুন, চাঁদাবাজির পাশাপাশি নতুন নতুন স্বশস্ত্র গ্রুপের আবির্ভাবে ভাতৃঘাতী সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনা বেড়েছে আরও কয়েকগুন। নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জেরে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো জড়িয়ে পড়ছে গুম, খুন, চাঁদাবাজির মতো ঘটনায়। তবে পাহাড়ের এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লক্ষী পদ দাশ বলেন, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তি চুক্তি করেছেন এবং পাহাড়ের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছেন। চুক্তির বেশিরভাগ শর্ত পূরণ করা হচ্ছে ধীরে ধীরে। বাকি ধারাগুলোও বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু শান্তি চুক্তি অনুযায়ী, অস্ত্র সমর্পণ করলেও এখনও পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি গুম, খুন, চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা উচিত এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করার দাবি জানাচ্ছি।  

মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নস্ট করার জন্য এবং স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার লক্ষে একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী হত্যা করছে বলে অভিযোগ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর।

তিনি বলেন, সরকার রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শান্তি চুক্তি করেছে। চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে সবার সহযোগিতা ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে। বাকি ধারাগুলোও বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। কিন্তু সন্ত্রাসীরা এখনও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করেনি। গুম, খুন, চাঁদাবাজি এখনও বিরাজমান। কিছুদিন আগেও আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ জেএসএসের মূল দলের সন্ত্রাসীদের দায়ী করলেও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে জেএসএস। তৃতীয় কোনো পক্ষ জেএসএসকে কালার করার জন্য নেতা কর্মীদের চুক্তির আন্দোলন থেকে দূরে রাখার জন্য চক্রান্ত করে এসব করা হচ্ছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেএসএসের এক নেতা।

তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে থাকতে পারছি না। শান্তি চুক্তির বর্ষপূর্তিতে আমরা কোনো কর্মসূচিও পালন করতে পারছি না। বিচ্ছিন্নতাবাদী কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপকে বান্দরবানে আশ্রয় দিয়ে মদদ দিয়ে বান্দরবানের পরিবেশ নস্ট করা হচ্ছে। আর আমাদের নেতাকর্মীদের ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একেকজন নেতাকর্মীর নামে ৭ থেকে ৮টি মামলা রয়েছে। আমরা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কোনো আন্দোলন করতে পারছি না।

এদিকে, শান্তি চুক্তির কতগুলো ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এগুলো বাতিল এবং কিছু ধারা সংশোধনীর দাবি জানিয়েছে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ। চুক্তির এ ধারাগুলো বাস্তবায়িত হলে পার্বত্যাঞ্চলের বাঙালিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন বাঙালি নেতারা।

পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মজিবর রহমান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনা শান্তি চুক্তি করেছেন। কিন্তু শান্তি চুক্তির নামে জেএসএস একটি শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়েছে। তারা যে অস্ত্র সমর্পণ করেছে, সেগুলো সব অকেজো। অস্ত্র ভারী এবং কাযকরী অস্ত্রগুলো তারা সমর্পণ করেনি। যে কারণে তারা এখনও পাহাড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বান্দরবান জেলায় বছরে তারা ৪০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে। সেগুলো দিয়ে অস্ত্র কিনে তা দিয়ে চাঁদাবাজিসহ খুন খারাপি করে। শুধু তাই নয়, তারা পার্বত্য অঞ্চলকে একটি জুম্ম ল্যান্ড বানানোর প্রক্রিয়া করছে। সেজন্য তারা নানা কাজ করছে। একটি স্বাধীন দেশে থেকে আরেকটি দেশ জাতীয় সংগীত মুদ্রার প্রচলন এটা দেশ বিরোধী কাজ। তাই সন্তু লারমার গাড়ি থেকে জাতীয় পতাকা খুলে ফেলারও দাবি জানান তিনি।

এদিকে শান্তি চুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট। ইউপিডিএফের জেলার সভাপতি মংপ্রু মার্মা বলেন, শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে উন্নয়ন কাজ তরান্বিত হচ্ছে। সবার আর্থিক স্বচ্ছলতা আসছে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রেখে পাহাড়ে বসবাস করতে পারছে। তবে ভূমি নিয়ে যে সমস্যাটা আছে, সেটা নিরসন হলে পাহাড়ে আরও শান্তি বিরাজ করবে। বর্তমান সরকারপ্রধান শান্তি চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিক। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এই ভূমি সমস্যার সমাধানটাও করে দেবে। তবে ২৪তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি পালন করছে না চুক্তির অপর পক্ষ জেএসএস।

প্রসঙ্গত, গত ৩ বছরে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে আদিপত্য বিস্তার ও ভাতৃঘাতী সংঘাতে খুন হয়েছেন ২০ জন, অপহরণ হয়েছেন ৫ জন। এছাড়া শান্তি চুক্তির পর থেকে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ।


সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: শামসুল কবির শাহীন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক: মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির
নির্বাহী সম্পাদক:এম.এ কাইয়ুম

■ অফিস  :
প্রধান কার্যালয় : ২৪, গার্ডেন ভিউ, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লুফ রোড (লিংক রোড), ৬নং ব্রীজ, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
সম্পাদকীয় কার্যালয় : চৌধুরী সেন্টার, (এডুকেশন বোর্ডের বিপরীতে), (লিফট–০৬), ২২৫ সিডিএ অ্যাভিনিউ, মুরাদপুর, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।

মোবাইল : +88 01822-90 93 20
ই-মেইল : newsdesk24tv@gmail.com

কপিরাইট © 2018-2023 24tv.com.bd । একটি টুয়েন্টিফোর ফ্যামেলির প্রতিষ্ঠান
Design & Developed by Smart Framework